শেখ হাসিনার পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে দ্রুত বদল আনতে চাইছে পাকিস্তান। বাংলাদেশে ১৩ বছর পর শীর্ষ পর্যায়ের সফরে এসে সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের ঘোষণা দিয়ে গেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার।
মূলত হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে কূটনৈতিক সুযোগ দেখছে ইসলামাবাদ। এমন অবস্থায় বাণিজ্য ও কূটনীতিতে এগোচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক।
গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, গত ২৩ আগস্ট ভোরে ঝোড়ো হাওয়া আর মেঘলা আকাশে ঢাকা বিমানবন্দরে নামেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। ১৩ বছর পর এবারই কোনো শীর্ষ পাকিস্তানি কর্মকর্তা বাংলাদেশে এলেন, যে দেশটি আজ থেকে ৫৪ বছর আগে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছিল।
একইসঙ্গে উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা ইসহাক দার এ সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি হবে দুই দেশের ‘অংশীদারিত্বের নতুন অধ্যায়’। তিনি স্বীকার করেন, গত এক বছরে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অগ্রগতি হয়েছে।
ইসহাক দার বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এমন এক পরিবেশ গড়ে তুলতে, যেখানে করাচি থেকে চট্টগ্রাম, কোয়েটা থেকে রাজশাহী, পেশোয়ার থেকে সিলেট এবং লাহোর থেকে ঢাকা— দুই দেশের তরুণরা হাতে হাত মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে, ভাগাভাগি করবে তাদের স্বপ্ন।’
তার এ সফর মূলত মাসের পর মাস ধরে চলা কূটনৈতিক ও সামরিক যোগাযোগের পর বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষত, ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন।
তবে পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক মাসুদ খালিদ সতর্ক করে বলেন, অতীত এখনো দুই দেশের আস্থা তৈরিতে বাধা হয়ে আছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নতুন সরকার পাকিস্তানের উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্পর্কের পথে কৃত্রিম বাধাগুলো এখন দূর হয়েছে।’
কিন্তু সম্পর্ক গভীর করতে হলে ‘গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি দূর করার একটি কাঠামো’ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সামরিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ বেড়েছে
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। বিশ্লেষকরা এত দ্রুত সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠবে, তা ধারণা করেননি।
এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান ইসলামাবাদে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর ফেব্রুয়ারিতে যান বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। এরপর এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচ ঢাকায় আসেন।
এরপর মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘাতের কারণে ইসহাক দারের সফর পিছিয়ে যায়। তবে জুলাইয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি ঢাকা সফর করেন। অবশেষে আগস্টে দার ঢাকায় এলেন, একই সময়ে পাকিস্তানে যান বাংলাদেশের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ ফয়জুর রহমান। সেখানে তিনি পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দিলওয়ার হোসেন মনে করেন, পাকিস্তানের এই ‘তড়িঘড়ি’ কৌশলগত। তিনি বলেন, ‘হাসিনা সরকারের আমলেও পাকিস্তান সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়েছে। এখন তারা ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ের মতো সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেখছে।’
তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতায় আসা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছিলেন। তবে বাংলাদেশে শাসন পরিবর্তন প্রায়ই ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি করেছে। পাকিস্তান হয়তো বর্তমান বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের টানাপড়েনকেও কাজে লাগাতে চাইছে।
মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস এখনো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে গভীর ছায়া ফেলছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগী বাহিনীর হাতে লাখো বাঙালি নিহত হয়, প্রায় দুই লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হন। ভারতীয় সেনা সহযোগিতায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তার আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীন করে।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী মনে করেন, ভারতীয় ‘আঞ্চলিক আধিপত্য’ মোকাবিলায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে এক হতে হবে। গত মে মাসে কাশ্মিরে হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের আকাশযুদ্ধে এই বিরোধ আবার প্রকট হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান মনে করেন, ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক এখন কিছুটা শীতল হলেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতি সাধারণত অর্থনীতিনির্ভর। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কেবল নিরাপত্তা বা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং আঞ্চলিক সহযোগিতা ও অর্থনীতির ভিত্তিতেই গড়ে উঠতে পারে।’
চীনের প্রভাব
চীন বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়াচ্ছে। বেইজিং পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও হাসিনা সরকারের সঙ্গেও সম্পর্ক ভালো ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরও চীন তার অবস্থান ধরে রেখেছে। মার্চে ইউনূস বেইজিং সফর করেন। আগস্টে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক সপ্তাহের সফরে যান চীনে।
বাংলাদেশ ১২টি চীনা জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার বিষয় বিবেচনা করছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে এসব যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বও গভীর। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসব কারণে ঢাকা ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
বাণিজ্য ও রাজনীতি
দারের দুই দিনের সফরে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে শীর্ষ ভূমিকা রাখা ছাত্রনেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টিও (এনসিপি) ছিল।
পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক আবদুল বাসিত বলেন, বাংলাদেশে ২০২৬ সালের শুরুতে নির্বাচন হবে, তার আগে এসব বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। অতীতের সমস্যাগুলো দক্ষতার সঙ্গে সামলাতে হবে।’
অর্থনীতিতেও উভয় দেশ উপকৃত হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশ ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে, পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি মাত্র ২.৫ শতাংশ। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যও এখনো সীমিত। ২০২৪ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে ৬৬১ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করেছে, বিপরীতে আমদানি মাত্র ৫৭ মিলিয়ন ডলার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলওয়ার হোসেন বলেন, পাকিস্তান থেকে তুলা, টেক্সটাইল, চাল, সিমেন্ট, ফল ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, পাকিস্তান আমদানি করতে পারে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য, কেমিক্যাল, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও তামাকজাত দ্রব্য।
তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা ৪৩০ মিলিয়ন—যা পশ্চিম ইউরোপের দ্বিগুণেরও বেশি।
অতীতের ক্ষত
তবে ১৯৭১-এর ক্ষত এখনো বড় বাধা। বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে এখনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা চায়। এছাড়া, বাংলাদেশে বসবাসরত দুই লাখেরও বেশি উর্দুভাষী মুসলমানের বিষয়টি অমীমাংসিত। তারা মূলত বিহার থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন, তবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ তাদের পূর্ণ নাগরিক অধিকার দেয়নি এবং পাকিস্তানও তাদের নিতে অনিচ্ছুক।
এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভাগাভাগি এবং ১৯৭০ সালের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ঘোষিত সাহায্যও এখনো বিতর্কের বিষয়।
তবুও পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব আইজাজ চৌধুরী বলেন, দুই দেশের জনগণ পুনর্মিলনের পক্ষে। ১৯৭১ সালের ঘটনার জন্য পাকিস্তানের মানুষও সমানভাবে দুঃখিত। এখন সবাই সামনে এগিয়ে যেতে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিলওয়ার হোসেন বলেন, হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হলেও মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে বাংলাদেশের জনমত অপরিবর্তিত। অতীত ভুলে থাকা সম্ভব নয়, তবে কূটনীতি সবসময়ই গতিশীল। দুই দেশ অর্থনীতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতিতে সহযোগিতা বাড়াতে পারে, পাশাপাশি অতীতের ক্ষত নিরাময়ের প্রক্রিয়াও চালিয়ে যেতে পারে।
বিগ ডেটা এবং রিয়েল-টাইম ডেটা-ড্রিভেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের নিরাপদ ও উদ্ভাবনী সেবা দেয়ার স্বীকৃতি হিসেবে আন্তর্জাতিক ‘ডেটা ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে বিকাশ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিগ ডেটা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ক্লাউডেরা, ডেটা ব্যবস্থাপনা ও অ্যানালিটিক্সে উদ্ভাবনী প্রয়োগকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৩ সাল থেকে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। এ বছর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ‘ডেটা ইন মোশন অ্যান্ড স্ট্রিমিং সাকসেস’ বিভাগের বিজনেস ইনোভেশন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হিসেবে পুরস্কার জিতে নিয়েছে বিকাশ।
প্রথম বারের মতো কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘ক্লাউডেরা ডেটা ইমপ্যাক্ট অ্যাওয়ার্ডস’ জিতেছে বিকাশ। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর-এর মেরিনা বে-তে এক জমকালো অনুষ্ঠানে বিকাশ-এর পক্ষ থেকে প্রোডাক্ট ও টেকনোলজি ডিভিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: মহিউদ্দিন এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। বিকাশ-এর পাশাপাশি ‘ডেটা ইন মোশন অ্যান্ড স্ট্রিমিং সাকসেস’ বিভাগের অন্য ক্যাটাগরিতে সিঙ্গাপুরের ওসিবিসি গ্রুপ এবং ভারতের ভোডাফোন আইডিয়া পুরস্কার পায়। পুরস্কার প্রদানের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি ও ডেটা-অ্যানালিটিক্স নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে নানা সেশনও অনুষ্ঠিত হয়।
২০১১ সালে যাত্রা শুরুর সময় থেকেই বিকাশ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সবার জন্য সহজ, নিরাপদ ও সময়সাশ্রয়ী ডিজিটাল আর্থিক সেবা নিশ্চিত করেছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দৈনন্দিন লেনদেনে স্বাধীনতা ও সক্ষমতা এনে দিয়ে তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে বিকাশ। নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি বিকাশ হয়ে উঠেছে মানুষের স্বপ্নপূরণের সারথি, তাদের পরিবারেরই একজন সদস্য। আর তাই, সাধারণের কাছে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছে ‘বিকাশ করা’।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি বাড়িতে গ্যাস সিলেন্ডারের লিকেজ থেকে বিষ্ফোরণ হয়ে আগুনে শিশুসহ একই পরিবারের ৫জন দগ্ধ হয়েছেন। বৃহস্পতিবার পৌঁনে ছয়টার দিকে উপজেলার কাঁচপুর পুরান বাজার মধ্যপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধদের মধ্যে শিশুসহ তিনজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা যায়। দগ্ধরা হলেন মানব চৌধুরী (৪০), তার স্ত্রী বাচা চৌধুরী (৩৮), মেয়ে মুন্নি (১৪), তিন্নি (১২) ও মৌরি (৬)। দগ্ধরা সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বলরামপুর গ্রামের বাসিন্দা। মানব চৌধুরী কাঁচপুর এলাকার ফ্যালকন নামের একটি টেক্সটাইল মিলে কর্মরত ছিলেন। এদিকে ঘরের ভেতর থাকা সিলিন্ডারের লাইনের লিকেজ থেকে জমা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের কারণ বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কাঁচপুর স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার জাহাঙ্গীর আলম।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার কাঁচপুর বিসিক শিল্প নগরীর পুরান বাজার মধ্যপাড়া শেখ ফরিদের তিনতলা বাড়ির নিচ তলায় একমাস আগে ভাড়া আসেন মানব চৌধুরী ও তার পরিবার। বৃহস্পতিবার ভোর পৌঁনে ৬ টার দিকে রান্নার জন্য চুলা জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন গিয়ে আগুন নিভিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রতিবেশী সবিনয় চন্দ্র দাস জানান, একটাই ঘর, সেটার ভেতরেই রান্নাঘর ও বাথরুম। ভোরে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে তারা সবাই পুড়ে যায়। আমি তাড়াতাড়ি গাড়ির ব্যবস্থা কইরা হাসপাতালে আনি। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জরী ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, দগ্ধদের মধ্যে মানব চৌধুরীর ৭০শতাংশ, বাচা চৌধুরীর ৪৫ শতাংশ, মৌরীর ৩৬ শতাংশ, মুন্নির ২৮শতাংশ ও তিন্নির ২২ শতাংশ পুড়েছে। তাদের ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শিশুসহ তিনজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
জয়পুরহাটে ঋণের বোঝা সইতে না পেরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন ফারুক হোসেন নামে এক সহকারী শিক্ষক। গত বুধবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেটে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সান্তাহার রেলওয়ে থানাকে জানায়।
নিহত ফারুক হোসেন (৫০) কালাই উপজেলার হারুঞ্জা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। তিনি উপজেলার হারুঞ্জা পূর্বপাড়া এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে।
পরিবার জানায়, ফারুক হোসেন দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইসিস রোগে ভুগছিলেন। একহাত সম্পূর্ণ অবশ থাকায় স্বাভাবিক চলাফেরা করতেও তার কষ্ট হতো। অসুস্থতার কারণে নিয়মিত চিকিৎসা ও ব্যয়বহুল ওষুধের খরচ চালাতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন এনজিও, সমবায় সমিতি ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে একাধিকবার ঋণ গ্রহণ করেন। অভাব-অনটনের কারণে তার মাসিক বেতনের বেশিরভাগ অংশই কিস্তি ও উচ্চ সুদের ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়ে যেত। ফলে সংসার চালাতে গিয়ে তাকে চরম আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো পথ না দেখে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। গত বুধবার বিকেলে বিদ্যালয় ছুটির পর বাড়িতে ফিরে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি বাইরে বের হয়ে যান। পরে জয়পুরহাট শহর হয়ে পাঁচবিবি যাওয়ার পথে পুরানাপৈল রেলগেটে গিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন।
নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঋণের বোঝা আর মানসিক চাপ সইতে না পেরে এই পথ বেছে নিয়েছে। এখন আমি সন্তানদের নিয়ে কিভাবে চলব? ওরা বাবাকে হারাল, আমি স্বামীকে হারালাম।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তামবিরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাপ দিলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার এবং সান্তাহার রেলওয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
আড়িয়াল বিলের মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালি এলাকায় কৃষি জমির পাশে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা একটি অবৈধ অ্যালুমিনিয়াম গলানোর কারখানা অব্যাহতভাবে পরিবেশ দূষণ করে চলেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, চুরাইন বাড়ৈখালি সেবক সংঘের মাঠের পাশ দিয়ে কিছুটা সামনে আড়িয়াল বিলের কৃষি জমির পাশে একটুকরো উচু জমিতে অ্যালুমিনিয়াম/ ধাতব রিসাইক্লিংয়ের জন্য একটি বাঁশের ঘর বানানো হয়েছে। ঘরটির ভেতরে না যাওয়া গেলেও বাইরে দেখে বোঝা যাচ্ছে এখানে ভারি কোনো ধাতু গলানোর কাজ চলছে। অত্যধিক পরিমাণে জ্বালানি পোড়ানোর কারণে কারখানার উপরের অংশ দিয়ে দিন-রাত কালো ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে। এছাড়া অ্যালুমিনিয়াম পাউডারের সাদা অংশ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের গাছ-সবজি বাগানের উপর। এতে সবুজ গাছের পাতা রুপ নিয়েছে ধূসর রংয়ে। পাশাপাশি কারখানায় অ্যালুমিনিয়াম গলানোর পর যে বর্জ্য নির্গত হচ্ছে সেগুলো সরাসরি ফেলা হচ্ছে পাশের আড়িয়াল বিলের পানিতে। ধীরে ধীরে সেই কেমিকেলযুক্ত আবর্জনা পানিতে মিশে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো বিলে।
স্থানীয় কৃষক রিংকু খান বলেন, আড়িয়াল বিলে ৪০০ শতাংশ জমিতে ধানচাষ করে আমার পরিবার। প্রতিবছর আমরা প্রায় ১ হাজার মন ধান উৎপাদন করি। এই কারখানাটি আমাদের জমিগুলো ধ্বংস করছে।
বাড়ৈখালি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ইমরান তালুকদার বলেন, কারখানাটি চালানোর জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাছ থেকে ন্যূনতম কোন অনুমতি নেই। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মিটিংয়েও আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে কারখানা মালিক ও জমির মালিককে ১৫দিনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। দুমাস হয়ে গেলেও কেউই পরিষদে আসেনি।
শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মহিন উদ্দিন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে সম্প্রতি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমরা সবার সহযোগিতা করবো।
পরিবেশ অধিদপ্তর, মুন্সীগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বাড়ৈখালি বা আড়িয়াল বিলের পাশে এরকম কোনো কারখানার বিষয়ে আমার জানা নেই। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকেও আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে জয়পুরহাটে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম ৪ দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। বইমেলার আয়োজন করায় খুশি স্থানীয়রা। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকবে মেলার স্টল। গত বুধবার কালাই উপজেলা পরিষদের নতুন হলরুমে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কালাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইফতেকার রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. মনোয়ারুল হক, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবিদ আব্দুল্লাহ, উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান চৌধুরী, কালাই সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নাজিম উদ্দিন, কালাই ময়েন উদ্দিন সরকারি উচ্চ বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম বকুল প্রমুখ।
বইমেলা দেখতে আসা শিক্ষার্থী এস এম সাদমান সাইফ রাইমান বলে, আমি প্রথমবার বইমেলা দেখলাম। এর আগে আমাদের এখানে কোনো বইমেলা হয়নি। দেখে অনেক ভালো লাগছে।
আরেক শিক্ষার্থী সেজান আহম্মেদ বলে, বইমেলায় অনেক লেখকের বই যা আমাকে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। আমরা চাই আগামীতে স্থানীয়ভাবে দীর্ঘ মেয়াদি বইমেলার আয়োজন করা হোক।
ভ্রাম্যমাণ বইমেলার ইউনিট ইনচার্জ অমিত চক্রবর্তী বলেন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজন ৪দিনব্যাপী বৃহস্পতিবার থেকে কালাইয়ে বইমেলা শুরু হয়েছে। বইমেলা উপলক্ষে থাকছে চিত্র অংকন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। মেলায় ১৫০টি প্রকাশনীর ১০ হাজারের বেশি বই রয়েছে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামিমা আক্তার জাহান বলেন, আজকের আয়োজিত এ বইমেলা আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার। এই বইমেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার মানুষ বই পড়া ও ক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ হবে। মেলাটিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
বিগত এক বছরে খুন, অপহরণসহ নানা অপরাধে আতঙ্কের জনপদ হয়ে উঠেছে ফটিকছড়ি ও ভূজপুর থানা। মব সৃষ্টির মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত করা যেন এখানকার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যার ফলে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জনমনে ভর করে এক অজানা ভীতি। বলতে গেলে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের পট-পরিবর্তনের পর থেকে দুইটি থানার আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হতে থাকে।
বিগত এক বছর ধরে উপজেলার দুটি থানায় প্রায় প্রতিদিনই সংঘটিত হচ্ছে কোন না কোন অপরাধ। এরমধ্যে খুন অপহরণ, চুরি-ডাকাতি, মারামারি, কাঠ-রাবার পাচার এমনকি টিলা কাটাসহ জায়গা-জমির দখল-বেদখল অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তবে, দুই থানার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করে গেলেও জনসচেতনতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে অভিমত সচেতন মহলের। দুইটি থানা এলাকায় সংঘটিত অপরাধ কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গেল বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত খুনের ঘটনা ঘটেছে মোট ১৮ টি। তন্মোধ্যে ফটিকছড়িতে ৮ টি। ভূজপুরে ১০ টি। এছাড়া দুই থানায় প্রভাব বিস্তার, মারামারি, অপহরনের ঘটনা ভুড়ি ভুড়ি। তবে একই সময়ে দুই থানা এলাকায় অপরাধ সংঘটিত হলেও তুলনামূলক বিচারে বেশি সংঘটিত হয়েছে ভুজপুর থানায়। সম্প্রতি মব সৃষ্টির মাধ্যমে ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চন নগর ইউনিয়নে পিটিয়ে হত্যা করা হয মাহিন নামে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রকে। এ ঘটনায় আরো দুই কিশোর গুরুতর আহত হয়। তখন এ ঘটনার বর্বরতার সংবাদ দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও স্থান পায়। এছাড়া গত ৫ জুলাই নাজিরহাট পৌরসভা এলাকায় শাহ আলম (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করার তিনদিন পর একই পৌরসভার পূর্ব ফরহাদাবাদ গ্রামে পুকুর থেকে মো. এনাম (৬০) নামে এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অন্যদিকে, গত ২০ জুলাই উপজেলার লেলাং ইউনিয়নে খাল থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সন্তোষ নাথ (৪০) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর ঘটনার দুই দিনের মাথায় ২২ জুলাই মাইজভান্ডার দরবার শরীফ এলাকায় টয়লেট থেকে মো. আরমান (২৮) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ৮ আগস্ট ফটিকছড়ি পৌরসভার রাঙ্গামাটিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর থেকে মনছুর বৈদ্য নামে এক ব্যক্তির গলাকাট লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
অন্যদিকে, গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর জাফত নগর ইউনিয়নে জায়গার বিরোধ নিয়ে আলমগীর ও জাহাঙ্গীর নামে দুই সহোদরকে মব সৃষ্টি করে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
ফটিকছড়ি থানার ওসি নূর আহমদ বলেন, অপরাধ যাতে না ঘটে সেদিকে নজরদারী রেখে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। গত এক বছর সংঘটিত সবকটি ঘটনার অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে।
অন্যদিকে, বিগত এক বছরে ভূজপুর থানায় আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতি ঘটেছে। ১০ টি হত্যাকাণ্ড ছাড়াও বিগত এক মাসের ব্যবধানে দুটি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে এখানে।
ভুজপুর থানার ওসি মো. মাহাবুবুল হক জানান, এলাকার আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। যেসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশ আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করে বিচারের জন্য আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
একটা সময় গাছের শুকনো ডাল-পাতা গাছের নিচেই পড়ে পচে নষ্ট হতো। আবার কেউ কেউ গ্রামে মাটির চুলায় এগুলো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে মাগুরা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এগুলো দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
মানুষ নয় বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি যেমন- কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, ইঁদুর, গিরগিটি, সাপ ও পাখির জন্য গাছের শুকনো ডাল-পাতা এবং ঘাস রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পশু-পাখির বাসা ও বানানো হচ্ছে খেলনা ও পোশাক। আর এসব তৈরি করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মাগুরার সফল উদ্যোক্তা রহমতুল ইসলাম বিদ্যুৎ ।
ছোটবেলা থেকেই পশু-পাখির প্রতি ভালবাসা এবং নিজের মধ্যে শিল্পবোধ পুষে রেখেছিলেন এই উদ্যোক্তা। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে দীর্ঘ ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে লেখাপড়া ও ব্যবসা শেষ করে ২০১৮ সালে জাপানিজ স্ত্রী ও কন্যার অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশে নিজ জেলা মাগুরার কেশব মোড়ের বাসিন্দা রহমতুল ইসলাম ফিরে আসেন এবং তৈরি করেন পরিবেশবান্ধব কারখানা। জাপান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব কারখানাটির নামকরণ করা হয় ‘বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড’।
মাগুরা-যশোর মহাসড়কের পাশে জাগলা এলাকায় ৪০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন ১০০% পরিবেশবান্ধব এই কারখানা। নিজেদের উৎপাদিত ও সম্পূর্ণ দেশীয় পণ্য দিয়ে তৈরি পরিবেশবান্ধব এ কারখানায় কাজ করেন ২৫০ জন নারীকর্মী। প্রায় ৩৫০ ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করা হয় এখানে। এছাড়া আশেপাশের গ্রামের আরও প্রায় তিন শতাধিক নারী ও পুরুষ কর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছেন এখানে। অনেক প্রতিবন্ধীও কাজ করেন এখানে। তারা ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করেন আর কারখানার কর্মীরা সেগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। রহমতুল ইসলাম বিদ্যুৎ প্রথমে সবাইকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ শেখান। বর্তমানে এখান থেকে প্রতি বছর ৫ থেকে ৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। এসব পণ্য ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
কয়েক বছর আগেও ফেলে দেওয়া হতো পেঁপে গাছের নল ও পাতা। এখন সেগুলো দিয়ে তৈরি করা হয় প্রায় ৩০ ধরনের পশু ও পাখির বাসা। এইসব পণ্য তৈরি করতে লাগে বাঁশ, পাটের দড়ি, আম ও নিম গাছের শুকনো ডাল-পাতা, ঘাস ইত্যাদি।
এছাড়া পেঁপে পাতা, আনারস ও আখ দিয়ে রোল বানিয়ে পশুর খাবার তৈরি করা হয়। এমনকি নীলকণ্ঠ ফুল দিয়ে তৈরি করা হয় পশু-পাখির পোশাক ও খাবার। কারখানার পাশাপাশি প্রায় ২০ একর জমিতে এসব পণ্য তৈরি করার জন্য যে কাঁচামাল প্রয়োজন সেই গাছগুলো রোপণ করা হয়। পুরোপুরি চাহিদা পূরণ না হওয়ায় পাশের গ্রামগুলো থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়। এসব পণ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছে মাগুরা সদর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া, কেচুয়া ডুবি, জাগলা, টিলা, ভাবনহাটি ও বড়সোলই গ্রামের মানুষজন।
কারখানার নারীকর্মী মেরিনা জানান, এখানে পর্যাপ্ত সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি কুকুর, বিড়াল, পুকুর ভরা মাছ বিভিন্ন জাতের হাঁস, মুরগি, ছাগল ও গরু পালন করা হয়। এই কারখানার মালিক এবং শ্রমিকদের মধ্যে যথেষ্ট সুসম্পর্ক রয়েছে। বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের যাতায়াতের খরচ প্রতিদিন দিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া কেউ ওভারটাইম করলে তার অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করে দেওয়া হয়।
কারখানার নারীকর্মী মেরিনা জানান, এখানে কাজ করে আমাদের সংসার খুব ভালোভাবেই চলে যায় এতে আমরা অনেক খুশি।
টিলা গ্রামের সাপ্লাইয়ার সৈয়দ আলী ও বিল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, ৮ থেকে ১০ ধরনের প্রোডাক্ট এ কারখানায় সাপ্লাই দেই তা দিয়ে আমাদের আয় ভালোই হচ্ছে।
সফল উদ্যোক্তা রহমতুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন, কুকুর, বিড়াল, খরগোশ, ইঁদুর, সাপ, গিরগিটিসহ বিভিন্ন প্রাণীর খাবার, পোশাক, বাসা ও খেলনা প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক প্রোডাক্ট তৈরি করা হয়। যা ১০০% প্রকৃতি থেকে নেওয়া। পণ্যের গুণগত মান ঠিক থাকায় ৬ বছরে প্রায় একশত কনটেইনার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে। বিশ্বে পোষা প্রাণীর খাবার পোশাক ও খেলনার বাজার প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলারের। তৈরি পোশাকের বাইরে এই খাতে নজর দেওয়া গেলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসবে দেশে দারিদ্র্যতা কমবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের দারিদ্র্যকে বিক্রি করি না আমরা স্কিল বিক্রি করি।
কারখানার শ্রমিকরা মালিকের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন ,এমন উদ্যোক্তা বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে তেমনি বৈদেশিক আই ও বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য